ছোটবেলায় আমার একটি অভ্যাস ছিল—প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়া। সেই মায়ের কোলে ছিলো এক অনির্বচনীয় শান্তি, এক গভীর মমতা। আমার মা-বাবা কখনও আমাকে কোন কাজ করতে দেননি। এমনকি খেলতে গিয়েও যদি আমি একটু মাটি মেখে আসতাম, মা রাগ করতেন—“তোর তো কষ্ট হবে বাবা!” বাবা বলতেন, “আমরা আছি না, তুই শুধু পড়াশোনা কর আর ভালো মানুষ হ।”
আমার বন্ধুরা যখন গল্প করত, কে কোথায় বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়েছে, কে মা’কে রান্নায় সাহায্য করছে—আমি চুপচাপ শুনতাম। কারণ আমার মা-বাবা বরাবরই চেয়েছেন আমি যেন শুধু পড়াশোনায় মন দিই। তাঁরা সব কিছু নিজের হাতে করে নিয়েছেন, যেন আমি একটুও কষ্ট না পাই।
একবার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হাসপাতালে নিতে হল। আমি তাঁর হাত ধরে বললাম, “বাবা, আমি সব করব। তুমি চিন্তা কোরো না।” তখন তিনি ক্লান্ত গলায় বলেছিলেন, “তুই এখানে কেন? তোর কষ্ট হবে তো বাবা!” সেই মুহূর্তে আমার চোখ ভিজে উঠেছিল। একটিবারও তিনি ভাবেননি নিজের কষ্টের কথা, চিন্তা করেছেন শুধু আমার কষ্ট নিয়ে।
মা এখনো আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেন না। বলেন, “তোর হাত নরম, কাজ করলে কষ্ট হবে।” আমি প্রতিবাদ করি, হাসি। কিন্তু জানি, এই নিষেধের ভিতরেও আছে এক অপার ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ স্নেহ।
আজ আমি বড় হয়েছি, স্বপ্ন দেখি সমাজে কিছু করার, প্রবীণদের জন্য কাজ করার। কারণ আমার মা-বাবাই আমাকে শিখিয়েছেন ভালোবাসা কাকে বলে, সেবা মানে কী। আমার ফাউন্ডেশন—প্রবীণ কল্যাণ ফাউন্ডেশন—তাঁদের ভালোবাসারই এক সম্প্রসারণ।
আমি জানি না, অর্থ দিয়ে কখনো মা-বাবার ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া যায় কিনা। তবে আমার অন্তরের গভীর থেকে একটাই প্রার্থনা করি—মহান রব, তুমি আমাকে এতটুকু সামর্থ্য দাও, যাতে আমি সারা জীবন তাঁদের সেবা করতে পারি। যেন তাঁদের মুখে সবসময় প্রশান্তির হাসি ফোটে।
আমি গর্বিত এমন বাবা-মা পেয়ে।
তাঁরা শুধু আমার অভিভাবক নন—তাঁরা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।
তাঁরা সত্যিই, ভালোবাসার এক জ্বলন্ত উদাহরণ।